শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
দিল্লি থেকে মমতা কত দূরে

দিল্লি থেকে মমতা কত দূরে

স্বদেশ ডেস্ক:

এ বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারে আহত হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন পায়ে চোট পেলেন, তার পর তিনি এক সভায় বলেছিলেন, এক পায়ে বাংলা বিজয়, দুই পায়ে দিল্লি। বেশ কিছু দিন ধরে বিষয়টি ঘুরেফিরে আসছে যে, মমতার চোখ এবার দিল্লির দিকে। চলতি সপ্তাহে দিল্লি সফরে গিয়ে সেই জল্পনা তিনি আরও উসকে দিয়েছেন।

এটি ঠিক যে, ভারতের রাজনীতিতে এখন শক্তিশালী বিরোধী দল বা জোটের বড় অভাব চলছে। ২০১৪ আর ২০১৯ সালে পর পর দুবার জাতীয় নির্বাচনে শতবর্ষী দল কংগ্রেসের ভরাডুবির পর বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে কংগ্রেস পুনরায় শক্তি নিয়ে পূর্ণরূপে ফিরবে, এটি খোদ কংগ্রেসের অনেক নেতাই বিশ্বাস করেন না। তা হলে ভারতে বিজেপিবিরোধী জোটের ভবিষ্যৎ কী? ভারতে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৪ সালে; কিন্তু এখনই জাতীয় নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে।

স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি চাইবে টানা তিন বছর ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড গড়তে আর বিরোধী সেই বিজয়রথ ঠেকাতে মরিয়া হয়ে লড়বে। এখানে প্রশ্ন আসে- ‘বিজেপিবিরোধীদের’ ঐক্য কতটা মজবুত হবে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত সপ্তাহে পাঁচ দিনের দিল্লি সফরে বেশ কিছু জরুরি বৈঠক করেছেন। বৈরিতা পাশে রেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেছেন। এর পর কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকের পর মমতা সাংবাদিকদের বলেন, বিজেপিকে ঠেকাতে হলে আমাদের সবাইকে এক হতে হবে। এ বিষয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ ছাড়া কংগ্রেসের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনে তিনি যে একটি বিরোধী জোট গঠনে তৎপর হয়েছেন, এই বার্তা সুস্পষ্ট করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বিজেপিকে হারিয়ে এখন অনেকটাই চাঙ্গা মমতা। সেই মনোবল তিনি জাতীয় রাজনীতিতে কাজে লাগাতে চান। ইতোমধ্যে তিনি মোদিবিরোধী মুখ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছেন। ‘বাঙালি প্রধানমন্ত্রী’ চাই হ্যাশট্যাগ দিয়ে অনলাইনে প্রচারও শুরু হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি অতটা সহজ হবে না। ভারতের মতো বহুজাতি, বহুভাষী একটি দেশে একজন আঞ্চলিক নেতা জাতীয় নেতা হয়ে ওঠার লড়াই বেশ কঠিন হবে বলে মনে করেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা।

ভারতের প্রখ্যাত ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোর সম্প্রতি বলেছেন, বিজেপি এককভাবে ততটা শক্তিশালী দল নয়, যতটা মনে হয়। এ ছাড়া যেসব রাজনীতিক দল আছে, এককভাবে অথবা জোটবদ্ধ হয়ে যে কোনো সময় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার সুযোগ সব সময়ই থাকে।

এই প্রশান্ত কিশোরকে মনে করা হয় ‘পরশপাথর’- নির্বাচনের আগে যে দল তাকে পেয়েছে, সে দলই জিতেছে। তিনি নরেন্দ্র মোদির বিজেপিকে যেমন জয়ী করেছেন, তেমনি মমতার তৃণমূলকেও কঠিক পরীক্ষায় পাস করার পথ বাতলে দিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি ঘোষণা দিয়েছেন- তিনি আর এই কাজ করবেন না, নতুন কিছু করবেন। কিন্তু কী করবেন, তা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। এমন ঘোষণা দেওয়ার পরও কিন্তু প্রশান্ত কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বাড়িতে গিয়ে বৈঠক করেছেন। সেই সময় সংবাদমাধ্যমে খবর এলো- এবার কি তা হলে কংগ্রেসের হয়ে খেলবেন প্রশান্ত। এ নিয়ে পরিষ্কার ভাষ্য এখনো আসেনি। তবে মোদির বিরুদ্ধে শক্তি জোগাতে কংগ্রেসকে যে সমমনা দলগুলোর কাছে যেতে হবে, এ কথা সহজেই অনুমেয়।

লোকসভা নির্বচনের এখনো তিন বছর বাকি রয়েছে। তবে রাজনীতির ময়দানে ছক কষতে এই সময় তেমন বেশি কিছু না। এদিকে টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় বিজেপির সমর্থন কিছুটা কমেছে। বিশেষ করে চলমান করোনা মহামারীতে নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তায় বেশ ভাটা পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার পদত্যাগ চেয়ে বেশ প্রচার চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে সেসব পোস্ট আবার মুছে ফেলার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ উঠেছে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আবার পেগাসাস কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে- বিজেপি সরকারবিরোধী নেতাসহ অনেকের ফোনে আড়ি পেতেছে। এসব বিষয় বিজেপির জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। কিন্তু বিরোধীপক্ষের জন্যই এসবই দিল্লি জয়ের ‘চাবি’। কিন্তু সেই চাবি কার হাতে থাকবে সেটিই বিষয়। মমতাকে নিয়ে আলোচনা হলেও বিরোধী জোটের নেতৃত্ব পেতে হলে তাকে আরও অনেকটা পথ অতিক্রম করতে হবে। মমতা কি তা পারবেন? সেটি হয়তো সময়ই বলে দেবে। কিন্তু মমতা যে ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছেন, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877